Header Ads

ad728

আত্মহত্যায় বাধা দেয়া রিকশাচালককে ৮ বছর পর তরুণী যে প্রতিদান দিলেন, তা অবিস্মরনীয়

আত্মহত্যায় বাধা দেয়া রিকশাচালককে ৮ বছর পর বাঁচাল তরুণী – আট বছর আগে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন এক তরুণী। তখন তাকে বাধা দেন রিকশাচালক বাবলু শেখ। আত্মহত্যা করতে না দেওয়ায় তখন রিকশাচালকের ওপর প্রচণ্ড চড়াও হন ওই তরুণী, করেন বকাঝকা। মেয়েটি আজ ডাক্তার। আট বছর পর ওই তরুণী ও রিকশাচালকের জীবনে ঘটেছে বিস্ময়কর ঘটনা।
ঘটনাটি ফেসবুকসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।৫৫ বছরের রিকশাওয়ালা বাবলু শেখ ও ওই তরুণীর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বাংলাদেশের ফটোগ্রাফার জিএমবি আকাশ। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেছেন হৃদয়স্পর্শী এক ঘটনা।
 

সম্পর্কের টানাপড়েনের কাছে হার মেনে রেল লাইনে প্রাণ দিতে গিয়েছিলো মেয়েটি। সেই সময় তাকে দেখে ফেলেন বাবলু। নিজের প্রাণের মায়া না করেই ঝাঁপিয়ে পড়ে হাত ধরে টেনে এনে বাঁচান মেয়েটিকে। তারপর কেটে গেছে বেশ কয়েক বছর। এক সময় হতাশা গ্রাস করা যে মেয়ে রেল লাইনে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভেবেছিলো, তিনি এখন ডাক্তার। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বাবলু যখন মরাণপন্ন, সেই মেয়েই বাঁচিয়ে তুললেন বাবলুকে।

হাসপাতালে বিছানায় বাবলুর স্বীকারোক্তি, ’তার একটি মেয়ে আছে। মেয়ে ডাক্তার। একদিন যদি তার প্রাণ না বাঁচাতেন, তা হলে আজ সে ডাক্তার হতে পারতো না।’

এ ঘটনাই বাবলুর বয়ানে নিজের ফোটোগ্রাফি ব্লগে তুলে ধরেছেন আকাশ। যেখানে বাবলু বলছেন, ’আমি আর আমার স্ত্রী সব সময় মেয়ে চাইতাম। কিন্তু আমাদের তিন ছেলে। ৩০ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছি। বেশির ভাগ সময়ই যাত্রীরা খুব কটুভাষী হয়। একদিন সকালে এক ভদ্রলোক তার মেয়েকে আমার রিকশায় তুলে দিয়ে কলেজে নিয়ে যেতে বলেন। বলেছিলেন সাবধানে নিয়ে যেতে। কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটা কাঁদতে শুরু করে। আমি পেছন ফিরে তাকালে আমাকে এক ধমক দেয়। কিছুক্ষণ পর আমাকে থামতে বলে কাকে যেন ফোন করার চেষ্টা করে। ওর কান্না দেখে বুঝতে পারি কোনও ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো বাড়ি থেকে। কিন্তু, ছেলেটা আসেনি। হঠাৎ রিকশা থেকে ঝাঁপ দিয়ে পাগলের মতো রেল লাইনের দিকে ছুটতে শুরু করে। আমি চলে আসছিলাম। হঠাতই মেয়েটির বাবার মুখটা মনে পড়ে গেল। রিকশা ছেড়ে ওর পেছনে ছুটলাম।’

’ওকে আটকে দিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ আমার ওপর চড়াও থাকে। পরে চিৎকার করার পর অঝোরে কাঁদতে থাকে। আমি থামাইনি। ওকে কাঁদতে দিয়েছিলাম। প্রায় তিন ঘণ্টা কেটে যায় এভাবেই। তারপর ও নিজেই আমাকে বলে রিকশা নিয়ে আসতে। আর একটা কথাও আমরা বলিনি।’

’ততক্ষণে বৃষ্টি নেমে গেছে। বৃষ্টির মধ্যেই ওকে বাড়ি পৌঁছে দিলাম। নামার সময় ছোট্ট অনুরোধ, কাকু, আর কোনোদিন আমার বাড়িতে এসো না। কাউকে বলো না তুমি আমাকে চেনো। ঘাড়় নেড়ে বাড়ি চলে এসেছিলাম। সেইদিন কোনও কথা বলিনি, কিছু খেতেও পারিনি। মনে হয়েছিলো ভগবান মেয়ে না দিয়ে ভালোই করেছেন।’

’তার পর কেটে গেছে আট বছর। হঠাৎই সেই দুর্ঘটনা। অজ্ঞান হয়ে যাই। সবাই ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলো। জ্ঞান ফিরতেই দেখতে পাই সাদা পোশাক, গলায় স্টেথোস্কোপ, চোখে চশমা এক তরুণী। আমার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে জানতে চাইছেন, কেমন আছি। কেন আমি এতোদিন দেখা করতে আসিনি। প্রথমে চিনতেই পারিনি। যখন বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো, শুনতে পেলাম, স্যার উনি আমার বাবা। বয়স্ক ডাক্তার ইংরেজিতে কিছু বললেন। আমার জখম হাতটা নিজের হাতে নিয়ে মেয়েটি বললো, যদি এই বাবার সাহায্য না পেতাম, তা হলে আমি ডাক্তার হতে পারতাম না।’

’সরু বিছানায় শুয়ে চোখদুটো জোর করে বন্ধ করে রেখেছিলাম। এ অভাগা রিকশাওয়ালার একটা মেয়ে আছে। এক ডাক্তার মেয়ে।’

No comments

Theme images by Dizzo. Powered by Blogger.